নিশি --
জয়িতা ভট্টাচার্য
দীর্ঘ একটি ক্যাঁচ শব্দে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে পড়লো।মনোজ স্টেশনে পা দেওয়ামাত্র আকাশ ফাটিয়ে কাছে একটি বাজ পড়লো।মনোজের হাতে স্যুটকেস আর কাঁধে বড়ো সড়ো একটা ব্যাগ।বাজের সাদা আলোয় ও তুমুল বৃষ্টিতে মনোজ দেখলো বর্ষাতি পরা একটি লোক প্রায় তাকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেনে উঠে পড়লো।মাটির প্ল্যাটফর্ম, একটি বুড়ো রোগা লোক গামছা জড়িয়ে এগিয়ে আসছে।মনোজের পেছন দিয়ে ধীর গতিতে চলে যাচ্ছে ট্রেন।সামনে কলাবন আর নানা গাছ ঝোড়ো হাওয়ায় জড়ামড়ি করছে তারই ফাঁকে পলকের জন্য একটি কালচে ছায়ামূর্তি সরে গেলো।মনোজ ভিজে যাচ্ছে।রামশরণ তার হাত থেকে মালপত্র নিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটছে।ডামডিমের নতুন স্টেশন মাস্টার।মনোজ কাক ভিজে অবস্থায় ও অবাক হলো কিছুটা অপমানিত ও।পুরোনো স্টেশন মাস্টার তার কাজ বুঝিয়ে দেওয়া দূরের কথা একটা ভদ্রতা ও করলো না।
দুটি মাত্র ঘর।একটি তার বসবাসের অন্যটি কাজের।ডিমডিমা তে সারাদিনে দুটি ট্রেন পাশ করিয়ে দেওয়ার দ্বায়িত্ব তার।এসব জেনে এসেছে দীর্ঘ দিনের বেকার জীবনে ইতি টেনে।বৃষ্টি র শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না।মনোজ ভিজে জামা পাল্টে নেয়।
রামশরণ কি বোবা?ঠিক তখনই খসখসে গলাটা শুনতে পায়,যেন লম্বা কুঁজো র মধ্যে দিয়ে কেউ বলে উঠলো
----"আমি লাইনম্যান আর এখানে আপুনার রাঁধুনি বেয়ারা আর সব সময়ের সঙ্গী।" কথাগুলো শেষ করে অদ্ভুত ভাঙা গলায় আধো অন্ধকারে হেসে ওঠে রামশরণ।
বৃষ্টি পড়তেই থাকে রাতভর।ঘুম আসে না।সকাল ন টায় আপ ট্রেন।বর্ডার পেরিয়ে আসে।পাশেই পরশি দেশ।কালো ছায়া টা পুরুষের ছিলো না।এত বৃষ্টি র রাতে কে তবে!
মনোজ বসে আছে শালবনে।এখন দুপুর।কিন্তু রোদ্দুর আটকে আছে শালবনের ঘন জঙ্গলে।এছাড়া আমগাছ অজস্র।কলকাতার ছেলে মনোজ জানে না বাকি সব আরো কত গাছের নামগুলো।কত আম।ঝরে পড়ে আছে।গরুতে খায়।সকালের দিকে দূর গ্রাম থেকে দু চারজন আসে তড়িঘড়ি আমি ঝুড়িতে ভরে নিয়ে চলে যায়।মনোজ ওদের সঙ্গে ভাব জমাবার চেষ্টা করে।কিন্তু ওদের চোখে মুখে কী এক আতংক যেন।রামশরণ সারাদিনে দু চারটির বেশি কথা বলে না।মনোজ পাথরের ওপর বসে আছে।ছোটো বেলার কথা মনে পড়ে তার।কলকাতার হৈচৈ আবছা আলোর মতো জেগে ওঠে এই নিঃসীম বনে।প্রায় ঝিমুনি এসে গেছিলো খুটখাট আওয়াজে তন্দ্রা কেটে যায়।পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় মনোজ।একটা ফর্সা ছোট্ট ছেলে।আমি, জাম,পাতা কুড়িয়ে নিচ্ছে।ছোট ছোট দুই হাতের মুঠোয় আঁকছে না।মনোজ কাছে যায়।মুহুর্তে বালক ভয়ে সাদা।---'কী নাম তোমার?কোথায় থাকো।' পায়ে পায়ে পিছু হঠছে।
---"ভয় পেও না খোকা।কাছে এসো"মনোজ নরম করে বলে।
মাথা নাড়ে ছেলেটি।ভয় ভয় আঙুল দেখায় স্টেশনের দিকে।মনোজ বুঝতে পারে ও রামশরণকে ভয় পায়।
সে চলতে থাকে ছেলেটির সঙ্গে।কথা বলে না কেউ ।বিকেল পড়ে আসছে।
লালচে আলো।সামান্য অন্যমনস্ক মনোজ আর গায়েব হয়ে গেল ছেলেটি।মনোজ অনেক দূর পর্যন্ত চলে যায়।একটা নদী।সরু।তিরতির করে বইছে।পাথরের চাঁই।ফাঁকে ফাঁকে নানা রকম বনজ গুলাম,লতা।হাঁপিয়ে যায় মনোজ।কোত্থাও নেই সে।দলে দলে পাখি ঘরে ফিরছে।কলরোল।সন্ধ্যা নেমেছে।কয়েকটি বাদুড় উড়ে গেল প্রায় তার মাথার ওপর দিয়ে। রামশরণের পই পই করে জঙ্গলে ঢোকার নিষেধ ভুলে যায়।
বিরাট একটা চাঁদ উঠেছে।মনোজ বিমূঢ় হয়ে পড়ে। একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে চাঁদের দিকে।কী যেন এক আকর্ষণ।নেশা।চারিদিকে মহুয়া গাছ ।মনোজ নিজেকে হারিয়ে ফেলে।
সিরসির করে হাওয়া দিচ্ছে।শীতল।স্লো মোশনে ঝরে পড়ছে হলুদ শালপাতা।পুরোনো স্মৃতির মতো।এখন সব পরিস্কার দেখা যাচ্ছে চৌদিক।একেই বলে কাক জ্যোত্স্না!
একটা রাতপাখি আচমকা ডেকে উঠলো।মনোজের কেমন অস্বস্তি হয়।তবু সে যেন আটকে গেছে এই জনহীন চরে।মনোজ হঠাৎ চমকে তাকায়।সারা শরীর ঘেমে উঠেছে।ও কি!ও কে ?সরু লিক লিকে একটা আপাদমস্তক কালো ছায়ার মতো নারী শরীর একটা ঝোপ থেকে ছুটে যাচ্ছে আরেক ঝোপে।কয়েক মিনিটে মনোজ একটু ধাতস্থ হয়।চিত্রার্পিতের মতো বসে থাকে।ছায়া নয়।কুচকুচে কালো শরীরটার কোনো ছায়া নেই এই ধপধপে চাঁদের আলোয়।জটা হয়ে যাওয়া দুচার গাছি চুল। কোথাও তাও নেই।একটা জীর্ণ কাপড়ের টুকরো গায়ে মিশে আছে।
মনোজ রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করে।নারীটি নদীতে নেমেছে।ডুবছে।অনেকক্ষণ পর মাথা দেখা যায় শুশুকের মতো।
সেই শিশু টি। যেন মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে।একটা ঘড়া খুব যত্ন করে টেনে আনছে।
ছায়াছবি যেন।কালো শরীর বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।চাঁদের আলো ঠিকরে পড়ছে গায়ে।শিশু টিকে দেখা যায় না আর।ঘড়া ভরে জল তুলে হঠাৎ এদিক ওদিক ভীত হরিণী র মতো চাইছে।মনোজ আওয়াজ না করে লুকিয়ে থাকে পাথরের আড়ালে।
এখন মধ্যরাত।ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না র শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না।একখণ্ড মেঘ এসে আড়াল করে চাঁদ।মনোজ সম্বিত ফিরে পায়।প্রাণপণে ছুটছে মনোজ।শালপাতার জঙ্গলে মচ্ মচ্ আওয়াজ হচ্ছে ।অনেক দূর থেকে নাকি সুরে কে যেন তাকে কী বলছে।
ঘুমের মধ্যে মনোজ অনেক অনেক উঁচু সিঁড়ির ওপর থেকে পা পিছলে পড়ে যাচ্ছে।ধড়মড় করে উঠে বসে।গলা শুকিয়ে কাঠ।কানে ভাসছে একটা খোনা গলা।একটানা নাকি কান্না।বাইরে একটা পাখি দুটো পাখির শিস শোনা যায়।তপ্ত দেহে মনোজ টের পায় ভোর এসেছে।গভীর ঘুমিয়ে পড়ে এবার।নিশ্চিন্তে।
তিনদিন জ্বরে ভুগে কিছু টা কাহিল মনোজ।রামশরণের কাছে তার কৃতজ্ঞতার সীমা নেই।শৈশবের মা হারানো আগাছার মতো বেড়ে ওঠা তার জীবনের এই স্নেহ আর সেবা এক পরম পাওয়া।নতুন জায়গায় আবহাওয়া মানিয়ে নিতে সময় লাগছে।তার ওপর নদীর ঠাণ্ডা হাওয়া সহ্য হয়নি বোধহয় ।
অনেক দূরের গ্রাম থেকে কয়েকটি গ্রামবাসিনী আমি জাম,শুকনো কাঠ কুড়োতে আসে।মনোজের জন্য কখনো মাচার সিমনা,লাউটা দিয়ে যায়। তারা বলে গেলো বাতাস লেগেছে ।শহরের ছেলে সে জানে না বাতাস লেগেছে মানে কী।একটি অল্প বয়সী সপ্রতিভ মেয়ে বুঝিয়ে বলে
---"তোমার খারাপ বাতাস নেগেছে।একবার ওঝা ডাকতি হবেক"
---"মানে?"
---"জঙ্গলে ভুল করে সন্ধ্যা বেলা যেওনি।হুই নদীর ধার থেকে শাকচুন্নিটা বেরিয়ে পড়ে।দেখেছিল আমাদের গেরামের মধু আর সেলিম।তিন মাসের মদ্যি মরি গেল"
ফিসফিস করে জানায় ময়না।
একি ছোটো বেলায় পড়া ভূতের গল্প!ভূত আবার কী।
আচমকা মনে পড়ে যায় এক জ্যোৎস্না ভেজা ঘোর কৃষ্ণা নারীমূর্তি।যেন বহু যুগ আগের এক রাত।শরীর এখনো দুর্বল।ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
রাতের ট্রেন চলে যায়।খাবার দিতে আসে রামশরণ।চারটে রুটি সিমভাজা আর ডাল।মনোজ রামশরণকে জিজ্ঞেস করে শাঁকচুন্নির কথা।মাঝে মাঝে রামশরণ বোবা হয়ে থাকে।এখনও চলে যায় নীরবে।
কিছুক্ষণ পর সিগারেট ধরিয়ে মনোজ প্ল্যাটফর্মে আসে।নিঃশব্দ নিশীথ রাত।দূরে আবছা একা একটা মানুষ কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে।কথা বলবে বলে এগিয়ে যায় রামশরণের দিকে কিন্তু কাছে গিয়ে সে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।রামশরণ কাঁদছে।বার বার মুছে নিচ্ছে তার মলিন গামছা দিয়ে অবিরাম অশ্রুধারা।
ছোটো ছেলেটিকে প্রায়ই দেখা যায় জঙ্গলে ফল কুড়োতে।মনোজ একবার কাছের শহর থেকে ঘুরে এসেছে।কী মনে হতে কিছু চকোলেট একটা বল আর জামা এনেছিল।সন্তর্পণে একটা করে জিনিস লুকিয়ে রেখে এসেছে জঙ্গলে একেক দিন একেক জায়গায়।ফিরে আর পায়নি।এভাবে এক নিঃশব্দ বন্ধুত্ব তৈরী হয় ছেলেটির সঙ্গে ।সে ঘরে আসে না।জঙ্গলের বাইরে আসে না।কথা বলে না কিন্তু হাসে।পালিয়ে যায় না তাকে দেখে।
আরো দুটি গোপন আবিষ্কারের পর মনোজ মনে মনে আবছা আলো দেখে রহস্যের। প্রায় দুপুরে রামশরণ কে খুঁজে পাওয়া যায় না।কোথায় যায় সে এই জনহীন প্রান্তরে !
আরো একদিন মনোজ নিশি অভিযান করে।এবার আরো সাবধানে।
পা টিপে টিপে নিঃসারে পৌঁছে যায় গহীন প্রদেশে।কাস্তের মতো চাঁদ আকাশে।পথ নেই তবু গাছের আড়াল ধরে এগোয় সে।
একটা জীর্ণ কুঁড়ে ঘর।ঝুপুস অন্ধকার যেন জমাট বেঁধে আছে।
হঠাৎ পেছনে খুট করে আওয়াজে পেছন ফিরে স্তব্ধ হয়ে যায় সে।সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিকষ কালো একটি মানুষের আকার।বন এখন বোবা।শুধু শ্বাস আর প্রশ্বাসের আওয়াজ।
পা দুটো যেন মাটি তে গেঁথে গেছে মনোজের।
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে কালীমূর্তি।
কতক্ষণ কেটে গেছে খেয়াল নেই।আস্তে আস্তে লিক লিকে হাত দুটো ওঠে।বিস্ফারিত মনোজ দেখে তার সামনে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে এক মানবী।
"চাঁদপুর এখান হইতে পঞ্চাশ কিমি দূর।মাঝে ঝিলিক নদী।মাঝে বর্ডার।
প্রতিমার বাপ এপারে আসত হরেক মাল নিতে।সেই জংশন এ।ওখানে আলাপ উদয় মুর্মু র সঙ্গে।প্রতিমা তখন চোদ্দ বছর।মেয়ে বড়ো বালাই।তাই বে হয়ে গেল প্রতিমার।ধান মারাই থেকে হেঁসেল সবই করতে হতো।
---"কতদিন আগের কথা কাকা?"
তা প্রায় বছর দশ হবে।তখনও ডামডিম এমন একলা হয়ে যায়নি।
--"কেন?কেন এমন জনহীন হয়ে গেল?"
রামশরণ আপন মনে বলতেই থাকে।উত্তর দেয় না।
এক বছর ওপারে মহামারি হলো।কলেরায় মরলো কত শুনি।
উদয় মরে গেলো।প্রতিমার পেটে বাচ্চা।একটা মেয়ে জন্মে মরে গেছে বিষে।
---"সাপের কামড়ে?"
--তা জানা যায় না।বনের ধারে পড়ে ছিলো মরে।
--"তারপর?"
প্রতিমার কপাল পুড়লো।খেতে পেত না।রাতে দেওরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে রোগে ভুগে ভুগে একদিন বাপের ঘরে পেলিয়ে এলো।
ছেলেটা বিয়োনোর পর বাপ পরদিনই পাঠিয়ে দিলো শশুরবাড়ি।অত্যাচার চলতে থাকে আবার।নারি শুকোয়নি তখনো।ছেলেটাকে নিয়ে ইমামের দুয়ারে নালিশ করে প্রতিমা।কদিন পর বাজ পড়ে দেওরটা মরে যায় ক্ষেতে।ঘরে একটা সাপ ঢুকে শশুরকে কাটে সেই বর্ষাতেই।এরপর গ্রামে রটে গেলো সে ডাইনি।একদিন ওঝা এসে ঝাঁটা মেরে মেরে ক্ষত বিক্ষত করে দিলো।পরের মাসে গেরামে এট্টা বউ দেখা গেলো গলায় দড়ি দিয়েছ।সে রাতে প্রতিমা ছেলে কোলে ঘুমোয় যে ঘরে আগুন ধরিয়ে দিল গ্রামের লোকেরা।
বাবু,মেয়েছেলে এমনিই বোঝা তায় বিধবা।মরে যাওয়া মঙ্গল।
মনোজ রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করে কাহিনী র তবু আপত্তি না জানিয়ে পারে না।
রামশরণ অন্ধকার করে হাসে।
---"তুমি শহরের লোক বুঝবে কী গো অজ গ্রামে এই বাংলা দেশের মেয়ে ছেলের নিয়তি।এপার ওপার একই"
--"প্রতিমা মরে গেলো!"
মরি গেলে ভালো হতো গো।আধপোড়া প্রতিমা জ্বলতে জ্বলতে ঝাঁপিয়ে পড়ল ঝিলিক নদীতে।
ছেলেটার কথা কেউ জানে না রোগে ভোগা ছেলে জলে ডুবে...মরে গেলো,শেয়ালে নেকড়ে তে ছিঁড়ে খেলো।
ডামডিম এর রাস্তায় এক অমাবস্যা রাতে একটা পেত্নির উৎপাত দেখা দিলো।রাতে এ গাছ সে গাছ এর ওর জানলায় কঙ্কালসার বিকৃত মুখ।ভয়ে কেউ আর বিকেলের পর বেরোত না।উঠোনে রাখা ফলটা চালটা ,মুর্গিটা গায়েব।অনেকে একঝলক দেখেই অজ্ঞান হয়ে গেছে।
গ্রামের শেষ কোণে একাদশী বৈরাগী থাকতো।রাতে তার ছেলে হলো।সে ভয় কাকে বলে জানত না।লোকে বলে একাদশীর ভূত প্রেতের সঙ্গে ওঠা-বসা।মনসুর ফকির এসে থাকতো একাদশীর ঘরে।দুজনে পীড়িত ছিলো।
সকালের ট্রেনে কেউ কেউ দেখেছিল একাদশী ফকিরের হাত ধরে চলে গেছে।আমিও দেখেছি।তবে ছেলেটা ছিলো না।ছেলেটা একাদশীর ঘরেও ছিলো না।এরপর দেশে খুব খরা হলো।ক্ষেত নেই ফসল নেই খাবার ।পেত্নির উপদ্রব,সবাই চলে গেলো গ্রাম ছেড়ে।সব জঙ্গলে ঢেকে গেলো।আমি রইলাম।
এক রাতে সে এলো।কাঠি কাঠি হাত বাড়িয়ে খাবার চাইলো।দিলুম।আমার মেয়েটা মরে গেছিলো তিনদিনের জ্বরে।কোথায় পাবো ডাক্তার।সে বহু কাল আগের কথা।
বউ চলে গেলো
খবর নেই তারও।ভূত পেত্নি যাই হোক কেমন মায়া হলো।সেই থেকে আমি একটু ...খেই হারিয়ে ফেলে রামশরণ
---"ও খুব ভালো বাবু কারো ক্ষতি করে না "কাতর হয়ে বলে রামশরণকাকা।
"কিন্তু এখানে স্টেশন মাস্টার টেঁকে না।একটাও লোক নেই।জঙ্গলে ঘেরা জায়গা।জংশন স্টেশনের লোক বলে এখানে ভূত আছে।মেয়েটাকে বারণ করি তবু ক্ষিদের জ্বালায় মাঝে মাঝে রাতের দিকে চলি আসে।
---"ছেলেটা একাদশী বৈরাগীর তাই না কাকা?"
মাথা নীচু করে রামশরণ।ও কথা বলতে পারে না
চোখ মোছে রামশরণ।মনোজ জানলার দিকে চায়।কেন যেন চোখটা জ্বালা করে।
আমি পালাবো না কাকা।কথা দিলাম আমি পালাবো না ওদের ফেলে।তোমার এই মেয়ে কে ফেলে।কথা দিলাম।
রাত এগারোটা।
রাতের ট্রেন আসছে।
পৃথিবীটা সুন্দর লাগছে।অনেক কাজ বাকি।রাতের অন্ধকার চিরে আলোটা এগিয়ে আসছে।নতুন আলো।